
বাংলাদেশে আছে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর, ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’। তারা চেষ্টা করছেন একাত্তরের গণহত্যার ইতিহাস তুলে ধরতে। তুলে আনতে নানা ধরনের কাজ করছে জাদুঘর। গণহত্যা, বধ্যভূমি, গণকবর ও নির্যাতন কেন্দ্রের জেলা জরিপ উল্লেখযোগ্য। কর্মকান্ডের মধ্যে পাল্টে যাচ্ছে গণহত্যা-নির্যাতনের প্রচলিত বয়ান।
একাত্তরের গণহত্যার সংখ্যাতাত্ত্বিক বিতর্ক খুব জনপ্রিয়। যেখানে যুদ্ধাপরাধী থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের মূল্যবান মানুষদের অনেকেও অংশ নিয়ে চলেছেন। যদিও পৃথিবীর ইতিহাসে গণহত্যার সংখ্যা নিয়ে কেউ বিতর্ক তোলেন না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পোলান্ডের অসউইৎজে কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে সে নিয়ে কেউ বিতর্ক তুলেন না। ইউক্রেনের হল্ডোমর জেনোসাইডে ন্যূনতম বা সর্বোচ্চ কত মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছেন কোনো বিতর্ক কোনোদিন নেই, কিন্তু এই দেশে দেশের রাজনীতিবিদ, বিখ্যাতরাই প্রশ্ন করেন নিয়মিত ৩০ লাখ মানুষ কীভাবে তখন গণহত্যার শিকার হয়েছেন? আর এই বিতর্কের অবসানে আমরা কোনো জরিপ কোনোদিন করিনি। সংখ্যাতাত্ত্বিক বিতর্কের জবাব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করা হয়নি। গণহত্যার তীব্রতা, ধরন ও বিস্তৃতি উঠে এসেছে আমাদের এমন জরিপে। গ্রাম পর্যায়ের জরিপে এসেছে একাত্তরের গণহত্যার বিস্তৃতি। প্রত্যন্ত গ্রামে, গ্রামেও পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে। তাদের দেশীয় সহযোগীদের নানা তথ্যের ভিত্তিতে গ্রামকে গ্রাম উজাড় করেছেন পাকিস্তানি বাহিনী। আমাদের জরিপের প্রধান বৈশিষ্ট্য ‘সংখ্যা’। তবে শহীদের নয়, শহীদের সংখ্যা নির্ধারণ আমাদের উদ্দেশ্যও ছিল না। মূলত গণহত্যা, বধ্যভূমি, গণকবর ও নির্যাতন কেন্দ্রের সংখ্যা খুঁজে বের করেছি। ‘গণহত্যা-বধ্যভূমি ও নির্যাতন কেন্দ্রে’র তথ্যভিত্তিক সবচেয়ে ভালো বই সুকুমার বিশ্বাসের ‘একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর’, অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত ‘মুক্তিযুদ্ধকোষ’ এবং অন্যতম মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. এম. এ হাসানের ‘গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও বিচারের অন্বেষণ’। সহায়ক বইগুলোতে গণহত্যা, বধ্যভূমি, গণকবর ও নির্যাতন কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ৯০৫, আমাদের জরিপে দেশের ২৩টি জেলায় সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭২৭টি। ৬৪ জেলায় কত হতে পারে?
আমাদের এই জরিপের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য প্রশিক্ষিত ও স্থানীয় গবেষকের গবেষণা। গণহত্যার কথা বলতে গেলে খুলনার চুকনগর, গল্লামারি, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ইত্যাদি ভয়ংকর ও বীভৎস হত্যাকান্ডের স্থানগুলোর নামগুলো বারবার আসে। জরিপে এমন অনেক গণহত্যা, বধ্যভূমির নাম কাজের মাধ্যমে পাওয়া গিয়েছে, যেগুলোর কোনো তথ্যই কোথাও বইতে নেই। এই গণহত্যা জাদুঘর প্রথমে জেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। প্রশিক্ষিত গবেষক তৈরি করেছে, তাদের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে কাজ করেছে। উদাহরণ দিনাজপুর জেলায় ১০১ জন গবেষককে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষিত গবেষকরাই দিনাজপুরসহ সে অঞ্চলে মাঠ গবেষণা করেছেন গ্রামগুলো ঘুরে তুলে এনেছেন একাত্তরের নতুন ইতিহাস।
জেলা জরিপের আরেক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য তার গবেষণা পদ্ধতি। আমরা জরিপের কাজে মাঠ গবেষকদের কাজ ‘ক্রস চেক’ করেছি। গবেষণা করতে সারা দেশের গণহত্যা, বধ্যভূমি, গণকবর ও নির্যাতনকেন্দ্রের তালিকা হয়েছে, চিহ্নিতও করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত করা গিয়েছে অরক্ষিত বধ্যভূমি, গণহত্যা ও গণকবরের মর্মান্তিক ইতিহাস।
জরিপ কাজগুলোর ভিত্তিতে গণহত্যা জাদুঘরের উদ্যোগে ‘অরক্ষিত বধ্যভূমি গণকবরের স্মৃতি সংরক্ষণ’ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। হচ্ছে স্মৃতিফলক। খুলনা, দিনাজপুর, বাগেরহাট ও পঞ্চগড় জেলার ৬০ বধ্যভূমিতে হয়েছে স্মৃতিফলক। জরিপগুলোর ভিত্তিতে জাদুঘর প্রথমবারের মতো পুরো দেশের গণহত্যা, বধ্যভূমি, গণকবর ও নির্যাতনকেন্দ্রগুলোর ‘জিপিএস জরিপ’ করেছেন, ‘ডিজিটাল ম্যাপিং’ এখন করা হচ্ছে। খুলনা বিভাগে ডিজিটাল জরিপের কাজ শেষ, জিপিএস ম্যাপিংয়ে গণহত্যার ইতিহাস ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে। জরিপগুলো বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বর্বরতা ও নির্যাতনের দালিলিক প্রমাণ হয়েছে। মহামূল্যবানও। একাত্তরের গণহত্যার তীব্রতা, বর্বরতার ইতিহাস তুলে এনেছে। জরিপ প্রধানত স্বজন হারানো, ভুক্তভোগী, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানে তুলে আনা হয়েছে। গণহত্যার ইতিহাসে এসেছে প্রান্তিক মানুষের মুক্তিসংগ্রাম। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর বীরত্বের ইতিহাসের বিপরীতে হয়েছে এই দেশের নিম্নবর্গের বেদনা ও অর্জনের ইতিহাস। ৩০টি জেলার জরিপ সম্পন্ন। অনেক সীমাবদ্ধতা আমলে নিয়ে এই জেলা জরিপগুলো থেকে যেসব ফলাফল পায়ো গিয়েছে, বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সবাই। আগের তিনটি রেফারেন্স গ্রন্থে পাওয়া তথ্যগুলোর তথ্যের সঙ্গে আমাদের কয়েকটি জেলা জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণই বিস্মিত হওয়ার কারণ সহজে খুঁজে দেবে। আমাদের ২৩টি জেলা জরিপের ফলাফল
নীলফামারী : নীলফামারী জেলা জরিপ করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আহম্মদ শরীফ। ডা. এম এ হাসানের বইতে নীলফামারী জেলায় পাঁচটি গণহত্যার কথা সংকলিত আছে। মোটামুটিভাবে জেলায় ৫ কি ৬টি গণহত্যা ও কিছু গণকবর ও নির্যাতন কেন্দ্রের কথা এলাকার মানুষও জানতেন। শরীফের জরিপ অনুযায়ী, নীলফামারীতে খোঁজ পাওয়া গেছে ১৯৭১ সালে গণহত্যা হয়েছে : ১১, বধ্যভূমি আছে : ৩৭, গণকবর আছে : ১৭, নির্যাতন কেন্দ্র আছে: ২০; মোট আছে= ৮৫।
বগুড়া: অধ্যাপক আহম্মদ শরীফ বগুড়া জেলায় জরিপ করেছেন। বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকোষ’- এ বেশি তথ্য আছে। গণহত্যা- বধ্যভূমি ও গণকবর বইতে ১৪টি উল্লেখ আছে। তার জরিপের প্রাথমিক ফল হলো গণহত্যা হয়েছে: ৪৫, বধ্যভূমি আছে: ৩৩, গণকবর আছে: ২০, নির্যাতন কেন্দ্র আছে: ৪১; মোট আছে= ১৩৯।
নাটোর: উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সুমা কর্মকার জরিপ করেছেন নাটোর। এখানে একাত্তরের তথ্য কম। ড. মামুনের মুক্তিযুদ্ধকোষে নাটোরে গণহত্যা বধ্যভূমি গণকবর ও নির্যাতন কেন্দ্রের সংখ্যা ৯টি আছে। তার জরিপের প্রাথমিক ফল: গণহত্যা হয়েছে : ৬৩, বধ্যভূমি আছে : ১৮, গণকবর আছে: ২২, নির্যাতন কেন্দ্র আছে: ০৪; মোট আছে ১০৭।
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে এই জরিপ করেছেন আক্তার বানু। মুক্তিযুদ্ধকোষে আছে ৪টি গণহত্যা, ১টি বধ্যভূমি ও ২টি গণকবর; মোট ৭টি। তার ফলাফলে গণহত্যা হয়েছে : ১৫, বধ্যভূমি আছে: ১৫, গণকবর আছে: ১২, নির্যাতন কেন্দ্র আছে : ৪২; মোট আছে =৮৪।
পাবনা: পাবনায় জরিপ করেছেন রোকনুজ্জামান বাবুল ও শিউলি খাতুন। মুক্তিযুুদ্ধ কোষের তথ্যে ১৩টি গণহত্যা ও ৮টি বধ্যভূমি আছে, মোট ২১টি। বাবুল ও শিউলির জরিপে: গণহত্যা হয়েছে: ৭৫, বধ্যভূমি আছে : ২৬, গণকবর আছে: ১২, নির্যাতন কেন্দ্র আছে: ১৩; মোট আছে= ১২৬।
রাজশাহী: রাজশাহী জেলার জরিপ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. মাহবুবর রহমান ও তাহসিনা শরমিন। সুকুমার বিশ্বাসের গ্রন্থে বিস্তারিত বিবরণ আছে। রাজশাহীতে বধ্যভূমি ও গণকবরের সন্ধান পেয়েছিলেন ১৮। গণহত্যার হিসাব দিতে পারেননি নানা কারণে। মাহবুব ও তাহসিনার জরিপের ফলাফল গণহত্যা হয়েছে : ১২৭, বধ্যভূমি আছে : ৯, গণকবর আছে : ২৬, নির্যাতন কেন্দ্র ১শর বেশি, মোট আছে = ২৬২।
সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় জরিপ করেছেন অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন। মুক্তিযুদ্ধকোষে গণহত্যা গণকবর বধ্যভূমি ও নির্যাতন কেন্দ্রের সংখ্যা এখানে ৭টি। তার জরিপে: গণহত্যা হয়েছে : ১৫, বধ্যভূমি আছে : ১১, গণকবর আছে: ৮, নির্যাতন কেন্দ্র আছে : ৭; মোট আছে= ৪১।
নারায়ণগঞ্জ : নামকরা নারী সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক রীতা ভৌমিক জরিপ করেছেন নারায়ণগঞ্জ। তিনি চারটি ক্ষেত্রে পেয়েছেন গণহত্যা হয়েছে: ২০৯, বধ্যভূমি আছে : ২৩, গণকবর আছে : ১০, নির্যাতন কেন্দ্র আছে : ৪৬; মোট আছে = ২৮৮।
ভোলা : ভোলায় জরিপ করেছেন গবেষক রেহানা পারভীন। তিনি চারটি ক্ষেত্রে পেয়েছেন গণহত্যা হয়েছে: ৩৭, বধ্যভূমি আছে : ৫, গণকবর আছে : ১৭, নির্যাতন কেন্দ্র আছে: ১৫; মোট আছে= ৭৪।
খুলনা : খুলনা জেলার জরিপ করেছেন বিএল (বজ্রমোহন) কলেজের অধ্যাপক অমল কুমার গাইন। তিনি চারটি ক্ষেত্রে পেয়েছেন : গণহত্যা হয়েছে : ১ হাজার ১৫৫, বধ্যভূমি আছে: ২৭, গণকবর আছে: ৭, নির্যাতন কেন্দ্র আছে: ৩২, মোট আছে= ১ হাজার ২শ ২৭।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধার জরিপ করেছেন জহুরুল কাইয়ুম। মো. মাহবুবর রহমানের একাত্তরে গাইবান্ধা’য় উল্লেখ আছে ৬ গণহত্যা, ৬ গণকবর, ৪ বধ্যভূমি, ৮টি নির্যাতন কেন্দ্র; মোট ২৪। তার জরিপের ফলাফল : গণহত্যা হয়েছে: ১৩৬, বধ্যভূমি আছে: ৯, গণকবর আছে : ১০, নির্যাতন কেন্দ্র আছে : ৮; মোট আছে= ১৬৩।
জামালপুর : জামালপুরের জরিপ করেছেন মামুন তরফদার। মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস : জামালপুর জেলায় ১০ গণহত্যার নিদর্শনের কথা আছে। তার জরিপের ফলাফল গণহত্যা হয়েছে : ১৯২, বধ্যভূমি আছে : ২২, গণকবর আছে : ৩৩, নির্যাতন কেন্দ্র আছে: ২১, মোট= ২৬৮।
নড়াইল : নড়াইলে জরিপ করেছেন অনুপ কুমার মন্ডল। আফরোজা পারভীন’র মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস : নড়াইল জেলা বইতে পাওয়া যায় ১১ গণহত্যার নিদর্শন। অনুপের জরিপের ফলাফল গণহত্যা হয়েছে : ১৪৯, বধ্যভূমি আছে : ৩, গণকবর আছে : ৪, নির্যাতন কেন্দ্র আছে : ৫; মোট= ১৬১।
পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ে জরিপ করেছেন দিনাজপুর মহিলা কলেজের সহকারি অধ্যাপক আলী ছায়েদ। নাজমুল হক’র পঞ্চগড় জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-গ্রন্থে ৮টির বেশির গণহত্যার নিদর্শনের কথা উল্লেখ আছে। ছায়েদের ফলাফল গণহত্যা হয়েছে: ৬৪৯, বধ্যভূমি আছে : ৪, গণকবর আছে : ১৭, নির্যাতন কেন্দ্র আছে : ২৩, মোট আছে = ৬৯৩।
মৌলভীবাজার : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক তপন পালিত মৌলভীবাজারে জরিপ করেছেন। তিনি ফলাফল পেয়েছেন গণহত্যা হয়েছে : ৩১৭, বধ্যভূমি আছে : ২৬, গণকবর আছে : ১৫, নির্যাতন কেন্দ্র আছে: ১৮, মোট রয়েছে= ৩৭৬।
যশোর : যশোর জরিপ করেছেন বিএল কলেজের অধ্যাপক শংকর মল্লিক। মুক্তিযুদ্ধকোষে ২১ গণহত্যার নিদর্শনের উল্লেখ আছে। শংকর কুমারের ফলাফল গণহত্যা হয়েছে : ৫৮৯, বধ্যভূমি আছে : ৩৯, গণকবর আছে : ৩৩, নির্যাতনকেন্দ্র আছে: ৩৬, মোট রয়েছে = ৬৯৭।
লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে জরিপ কার্যক্রম করেছেন গবেষক আজহারুল আজাদ জুয়েল। মুক্তিযুদ্ধকোষে ৬ গণহত্যার নিদর্শনের কথা উল্লেখ আছে। আজাদ জুয়েল জানাচ্ছেন গণহত্যা হয়েছে: ৫৬২, বধ্যভূমি আছে : ১৮, গণকবর আছে : ৮, নির্যাতনকেন্দ্র আছে : ১৩; মোট রয়েছে = ৬০১।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জরিপ করেছেন জয়দুল হোসেন। মুক্তিযুদ্ধকোষ-এ ৫১ গণহত্যার নিদর্শনের উল্লেখ আছে। জয়দুল বলছেন গণহত্যা হয়েছে: ৩৪৩, বধ্যভূমি আছে : ৩৫, গণকবর আছে : ১৮০, নির্যাতনকেন্দ্র আছে: ৯২; মোট রয়েছে = ৬৫০।
কক্সবাজার : কক্সবাজার জরিপ করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জগন্নাথ বড়ুয়া। জেলার গণহত্যা, বধ্যভূমি, গণকবর, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিস্থান চিহ্নিতকরণ সংক্রান্ত কমিটি ২৬ গণহত্যার নিদর্শনের কথা চিহ্নিত করেছে। জগন্নাথের জরিপের ফলাফল গণহত্যা হয়েছে: ১৯৫, বধ্যভূমি আছে : ২০, গণকবর আছে : ২৯, নির্যাতনকেন্দ্র আছে: ২৩; মোট আছে = ২৬৭।
বরিশাল : বরিশাল জেলায় জরিপ করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুজ্জামান শাহীন। তিনি ফলাফল দিচ্ছেন গণহত্যা হয়েছে: ২৪০, বধ্যভূমি আছে : ২০, গণকবর আছে : ২৩, নির্যাতনকেন্দ্র আছে: ২৩, মোট রয়েছে= ৩০৬।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে জরিপ করেছেন খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হৈমন্তী শুক্লা। তার জরিপের ফলাফল গণহত্যা হয়েছে : ১৯, বধ্যভূমি আছে: ১১, গণকবর আছে: ১১, নির্যাতনকেন্দ্র আছে : ১৫; মোট রয়েছে= ৬৬।
বাগেরহাট : বাগেরহাটে জরিপ করেছেন গবেষক দিব্যেন্দু দাস। তার জরিপের ফলাফল গণহত্যা হয়েছে: ৪৮, বধ্যভূমি আছে : ৪৫, গণকবর আছে: ১১, নির্যাতনকেন্দ্র আছে: ১৫; মোট রয়েছে= ১১৯।
মাগুরা : মাগুরার জরিপ করেছেন গবেষক শামসুন নাহার। তার জরিপের ফলাফল গণহত্যা হয়েছে : ২২, বধ্যভূমি আছে : ১০, গণকবর আছে : ৪, নির্যাতনকেন্দ্র আছে: ১২; মোট রয়েছে= ৪৮। বাংলাদেশের এই ২৩ জেলায় একাত্তরের বীভৎসতা ও চরম অন্যায়ের এক নজরে ফলাফল গণহত্যা হয়েছে মোট : ৫ হাজার ২২৩, বধ্যভূমি আছে : ৪৬৬, গণকবর আছে : ৫২৯, নির্যাতনকেন্দ্র আছে: ৫০৯; মোট রয়েছে = ৬ হাজার ৭২৭। তাহলে ৬৪ জেলায় জরিপ কাজ শেষ হওয়ার পর কী ফলাফল আসবে শিউরে ওঠার মতো। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লাখের বেশি হতে পারেন! আমাদের আবেদন ও দাবি শহীদের হিসেবে একাত্তরে শরণার্থী বাংলাদেীিদের মৃত্যুর সংখ্যা যুক্ত করতে হবে। এভাবে আমরা বাংলাদেশে গণহত্যার সংখ্যাতাত্ত্বিক ‘জনপ্রিয়’ বিতর্ক ও কেন্দ্র করে চালু থাকা রাজনীতির অবসান ঘটাব। যদিও প্রথম থেকেই বক্তব্য এ আমাদের সেটি গবেষণার মূল উদ্দেশ্য নয়। জরিপে সুনির্দিষ্ট ফলাফল পাওয়া যাবে সারা দেশের গণহত্যা-বধ্যভূমি, গণকবর ও নির্যাতনকেন্দ্র চিহ্নিত হবে। এই জরিপের ফলে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের অসম্পূর্ণ মোটা দাগের তালিকা পূর্ণ হবে। জেলাভিত্তিক স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা হবে। অরক্ষিত বধ্যভূমি, গণকবর সংরক্ষণের সুযোগ হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুনের নেতৃত্বে শিগগিরই সারা দেশে জেলা জরিপ শেষ করব। তৈরি হবে মুক্তিযুদ্ধের নতুন অন্য ইতিহাস, নতুন আরেক সমীকরণ। জেলা জরিপের জন্য প্রশিক্ষিত গবেষকরা ছড়িয়ে নিজ এলাকায়, দেশের বিভিন্ন দিকে যেসব তথ্য সরবাহ করছেন ও তত্ত্ব নির্মাণ করছেন সবই গবেষণার পদ্ধতি মেনে হচ্ছে। ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা গ্রাম থেকে গ্রামে। তাদের সক্রিয়তা সাধারণ মানুষের মনে উদ্দীপনা জোগাচ্ছে। মানুষ তাদের যেকোনো কাজে স্বতঃস্ফূর্ত সাহায্যের মানসিকতা প্রমাণ করছেন।
এই সমাজের ‘মাইক্রো’ বা অনু লেভেলে আমাদের গবেষকদের সক্রিয়তায় গণহত্যা-নির্যাতন-বধ্যভূমি-গণকবরের সংখ্যাগত প্রায় নিখুঁত হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে, তেমনি নিখুঁত বর্ণনা। জেলা জরিপ একাত্তরের ‘চেপে পড়া’ ইতিহাসে আলো ফেলেছে, ওপরের সারণি থেকে স্পষ্ট। একাত্তরে বিজয়ের গৌরবের পাশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্মমতার ইতিহাসই উঠে আসছে না, নির্মমতার মাত্রার যে ধারণাগুলো পাওয়া যাচ্ছে, আগের সব অনুমানই তুচ্ছ ও ম্লান করছে।
ইতিহাস জোগাড় করলে হয় না, খুব ভালোভাবে, আধুনিক উপায়ে সংরক্ষণ করতে হয়। ইতিহাস প্রচার করতে হয়, ইতিহাসকে চর্চা করতে হয় নিয়মিত। সেই মূল্যবান কাজগুলোর অংশ হিসেবে এই গণহত্যা জাদুঘর স্মৃতিফলক তৈরি ও জিপিএস ম্যাপিংয়ের মতো নানা আধুনিক কাজ পরিচালনা করছে। মুক্তিযুদ্ধে এই দেশের সর্বশ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণ ছিল মুখে স্বীকার করা হলেও, সেই শ্রেণিগুলোর ভাষ্য অনুপস্থিত ছিল এতকাল।
গণহত্যা জাদুঘরের স্থানীয়ভাবে ইতিহাস তুলে আনার উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের সব শ্রেণির অংশগ্রহণের পূর্ণাঙ্গ ছবি হাজির হচ্ছে; শ্রেণি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র সবার মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক স্থাপন সক্ষম হচ্ছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনার ঠিক রূপ মানুষের কাছ উঠে আসছে। ফলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসচর্চা শক্ত, অক্ষয় জমিন পাচ্ছে। এই ঠিক ইতিহাস প্রণয়ন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়নে কোনো বিকল্প নেই।
Comments(2)
আজহারুল আজাদ জুয়েল says
মার্চ 16, 2020 at 1:30 অপরাহ্নসঠিক বিশ্লেষণ
মো:সহিদুল ইসলাম says
জানুয়ারী 15, 2021 at 8:48 পূর্বাহ্নগণহত্যা নিয’তন ও বধ্যভূমি নিরক্ষণের ক্ষেত্রে বিশিষ্ট গবেষক বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ডক্টর মুনতাসির মামুন স্যার অত্যন্ত সময়াচিত পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন এব স্মৃতি সংরক্ষণে আক্রাইভ যাদুঘর অতুলনীয়।