২২ নভেম্বর ২০১৯ বাংলা একাডেমিতে ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর এবং বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর উদ্যোগে ‘১৯৭১ – এর গণহত্যা, বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়েছে। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আজ সকাল দশটায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, এমপি এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখনে আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক শিল্পী হাশেম খান, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। অতিথিদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক হিরণ¥য় কার্লেকার। সভাপতিত্ব করেন ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি ড. মুনতাসীর মামুন। দুই দিন ব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৭ টি দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনা ও প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন। ভারত, ইতালি, তুরস্ক, কম্বোডিয়া, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি দেশ থেকে ৫০ জন বিশেষজ্ঞ গবেষক এতে যোগ দিয়েছেন। আগামী দুই দিন মোট ছয়টি অধিবেশনে বাংলা একাডেমির আবদুল সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তন, কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষ ও ভাষ্কর নভেরা মিলনায়তনে এই অধিবেশনগুলো অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, এম পি দেশি বিদেশি সকল অতিথিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবাষির্কী পালিত হবে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি করা হয়েছে। আগামী বছর মুজিববর্ষ হিসেবেও পালিত হবে।’ তিনি গণহত্যা জাদুঘরের কর্মকা-ের প্রশংসা করে বলেন, ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর যে অপরাজনীতির সূচনা হয়েছিল তাকে পরাজিত করার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পিতার আরদ্ধ কাজ তিনি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। গণহত্যা আর্কাইভ ও জাদুঘর প্রতিষ্ঠা সেই কাজেরই একটি অংশ যা ১৯৭১ এ শহিদদের আত্মত্যাগ স্মরণ করিয়ে দেবে।
মাননীয় প্রতিমন্ত্রী একাত্তরের স্মৃতিচারণ করে গণহত্যা ও নির্যাতনের বিভৎস চিত্র তুলে ধরেন। তিনি ব্রম্মপুত্র নদের চরের গণহত্যা ও শতশত লাশ দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি নিজের পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দিজীবনের স্মৃতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যাদের জন্য এই দেশ তাদেরকে যদি স্মরণ না রাখতে পারি, তাহলে সব বৃথা হয়ে যাবে।
সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, খুলনায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৬ষ্ঠ তলা গণহত্যা জাদুঘর নির্মিত হচ্ছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চার স্বরূপ তুলে ধরে তিনি বলেন, শুধু বিজয়ের কথা বললে মুক্তিযুদ্ধের বহুমাত্রিকতা নষ্ট হয়ে যায়। জিয়া-খালেদা-নিজামীর অপপ্রচারের জন্য সেই সব স্মৃতি বিনষ্ট হয়ে গেছে। শত সংকট ও লাঞ্ছনা সত্ত্বেও মানবতাবিরোধীদের বিচারকার্য স¤পন্ন হচ্ছে। কিন্তু দুঃখ হচ্ছে পাকিস্তানিদের এখনো বিচার করা যায় নি। রোহিঙ্গা সমস্যার আন্তর্জাতিক সমাধান করতে হবে। নাহয় বাংলাদেশ ও আশেপাশের দেশগুলো আক্রান্ত হবে জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ দ্বারা। একাত্তরের ঘাতক -খুনি পাকিস্তানিদের বিচার করতে আমরা পারব। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন বলেই আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। আসুন, আমরা জয় বাংলা বলে এগিয়ে যাই।
অনুষ্ঠানে অতিথিদের স্মারক উপহার প্রদান করেন সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী শাহরিয়ার কবির। অতিথিরা সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা ও পোস্টারের মোড়ক উন্মেচন করেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের কিছু স্মৃতিস্মারক ও নিদর্শন গ্রহণ করা হয়।
১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর এর এটি তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন। ১৯৭১ সালে সংঘটিত গণহত্যা, বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি ও বঙ্গন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়।
২৩ নভেম্বর বাংলা একাডেমিতে ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর এবং বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর উদ্যোগে ‘১৯৭১ – এর গণহত্যা, বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আজ সকাল সাড়ে দশটায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো: আবু হেনা মোস্তফা কামাল, এনডিসি এর সভাপতিত্বে এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অতিথিদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যের জুলিয়ান ফ্রান্সিস, কম্বোডিয়ার কুম সোমালি, ভারতের ড. সঞ্জয় কে. ভরদ্বাজ, মিয়ানমারের ড. খিন জ উইন, তুরষ্কের ফেরহাত আতিক, বাংলাদেশের শাহরিয়ার কবির। সমাপনী বক্তব্য রাখেন ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের সভাপতি ড. মুনতাসীর মামুন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতিক।
দুই দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৭ টি দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনা ও প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। ভারত, ইতালি, তুরস্ক, কম্বোডিয়া, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি দেশ থেকে ৫০ জন বিশেষজ্ঞ গবেষক এতে যোগ দিয়েছেন।
সভাপতির বক্তৃতায় ড. মো: আবু হেনা মোস্তফা কামাল দেশি বিদেশি সকল অতিথিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল। ধ্বংসপ্রায় স্বাধীনতার চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করতে গণহত্যা জাদুঘর নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন সেই প্রচেষ্টারই অংশ। গণহত্যা জাদুঘরকে সংস্কৃতিমন্ত্রনালয় যে সহযোগীতা করছে ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে।
সমাপনী বক্তব্যে ড. মুনতাসীর মামুন একাত্তরের গণহত্যা-নির্যাতনের কয়েকটি নিদর্শন তুলে ধরে বলেন, গণহত্যা মুক্তিযুদ্ধের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই ইতিহাসকে আমাদের জনসম্মুখে তুলে ধরতে হবে। তিনি মাতৃভাষায় ইতিহাস চর্চার গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, মাতৃভাষায় ইতিহাসচর্চার মাধ্যমে ইতিহাসকে গণমুখী করা সম্ভব। মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ এসবের বিরুদ্ধে লড়তে এর প্রয়োজন অত্যাধিক। দেশের প্রতি আমাদের যে ঋণ তা আমরা শোধ করতে না পারলেও, স্বীকার তো করতে পারি। তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলে গেলে চলবেনা। এই ইতিহাস উঠে আসবে গণহত্যা নির্যাতনের ইতিহাসের মাধ্যমে। যারা গণহত্যা করেছে, যারা এর সমর্থন করে তারা সমানভাবে অপরাধী। তারা মানবসমাজের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। তিনি সম্মেলনের অংশগ্রহনকারী প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানান।
বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্যেও গণহত্যা বন্ধে পৃথিবীর প্রতি আহ্বান জানান। সেই সাথে বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তারা বলেন, যে ইতিহাস বিস্মৃত হয়েছে সেটি পুনরুদ্ধারের জন্য এই ধরণের সম্মেলন প্রয়োজন। উপস্থিত সকল বক্তাই একটি মানবিক পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।