জাদুঘর প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে প্রতিবছর শহিদ স্মৃতি স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হচ্ছে। এবার ৪র্থ বারের মত শহিদ স্মৃতি স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। ৪র্থ শহিদ স্মৃতি স্মারক বক্তৃতার বক্তা হিসেবে এবার উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ। এবারের বিষয় বাংলায় পাকিস্তান আন্দোলন, বাঙালির রাষ্ট্র-ভাবনা ও বঙ্গবন্ধু। বক্তা অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ তার স্মারক বক্তৃতায় বাংলার আর্থ-সামাজিক অবস্থা, বাংলায় পাকিস্তান আন্দোলনের ভিত্তি, মুসলিম লীগ রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু, ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব-পূর্ব অবাঙালি মুসলমানদের রাষ্ট্র-ধারণা, লাহোর প্রস্তাব, বাঙালির রাষ্ট্র-ভাবনা ও বাংলায় পাকিস্তান আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র-ভাবনা বনাম পাকিস্তান, ‘স্বাধীন অখ- বাংলা রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ও বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা, পাকিস্তান আন্দোলনে দ্বি-জাতিতত্ত্ব, মুসলিম লীগ/পাকিস্তান আন্দোলনে বাঙালি-অবাঙালি দ্বন্দ্ব, বাঙালির জাতীয় মুক্তির স্বপ্নপূরণ বিষয়গুলিকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘ভারতের ভূখণ্ড দ্বারা বিভক্ত হাজার মাইলের অধিক দূরত্বে অবস্থিত উত্তর-পশ্চিম (বর্তমান পাকিস্তান) ও উত্তর-পূর্ব (বর্তমান বাংলাদেশ) ভারতের দুটি অংশ নিয়ে ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র-ভাবনা ছিল না। তাই তাঁর মধ্যে পাকিস্তানের ‘মোহভঙ্গ’-এরও প্রশ্ন ওঠে না। পাকিস্তান আন্দোলন পর্বে বঙ্গবন্ধু ও বাঙ্গীয় মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের নেতা-কর্মীদের রাষ্ট্র-ভাবনা ছিল ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের বহুমাত্রিক রাষ্ট্রধারাণা অর্থাৎ (বর্তমান) পাকিস্তান ও ভারতের বাইরে উত্তর-পূর্ব ভারতের এ অঞ্চলে (বর্তমান বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকা) তৃতীয় একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। অতএব পরিবর্তিত অবস্থায় কালবিলম্ব না করে তাঁর নেতৃত্বে শুরু হয় ধর্ম নির্বিশেষে প্রধানত ভাষাভিত্তিক সর্বজনীন বাঙালির জাতীয় মুক্তি বা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নবতর পর্যায়ের সংগ্রাম, যা ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অন্তত হাজার বছর ধরে এ অঞ্চলে গড়ে ওঠে বাঙালি জাতির মুক্তির আকাক্সক্ষা, স্বপ্ন ও সংগ্রামের দীর্ঘ এক ঐতিহাসিক পথপরিক্রমা। শেষে বাঙালিকে ১৯৭১ এ পৌঁছাতে হয়েছে আর বাঙালির এই জাতীয় মুক্তি বা স্বপ্ন পূরণের মহানায়ক সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’ শহিদ স্মারক বক্তৃতায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডা. শেখ বাহারুল আলম। স্মারক বক্তৃতাটি বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে।