গত ২ এপ্রিল ২০১৮ (সোমবার) বিকেল ৪:৩০ টায় খুলনার বিএমএ ভবনের কাজী আজহারুল হক মিলনায়তনে ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’ এর পক্ষ থেকে ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। জাদুঘর ট্রাস্টের সম্পাদক ডা. শেখ বাহারুল আলম- এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মি. রিশি মিশ্রা। মি. রিশি তাঁর দীর্ঘ আলোচনায় বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, বাংলাদেশের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুিরন আফরোজের সাথে কাজ করতে গিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা-নির্যাতন ও যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি বিশদ জেনেছেন। গণহত্যা-নির্যাতন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত আইন ও বিচার ব্যবস্থার বিষয়ে জানার আগ্রহ থেকেই তাঁর এ বিষয়ে পড়াশুনা রয়েছে। তিনি বলেন, সকালে জাদুঘরের উদ্যোগে খুলনা শহর ও এর আশপাশের এলাকার বধ্যভূমি, গণকবর, নির্যাতন কেন্দ্রগুলো তার পরিদর্শনের সুযোগ হয়েছে। তার মতে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগী কর্তৃক বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের উপর চালিত নৃশংসতা, বর্বরতা নিঃসন্দেহে গণহত্যার সামিল। এই অপরাধ যে মানবতাবিরোধী অপরাধ তা অত্যাচার-নির্যাতনের ধরণ দেখলেই বুঝা যায়। যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত আইন ও বিচার ব্যবস্থার ব্যাপারে তিনি বলেন, আইন প্রণয়ন ও বিচার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মানদ- যথাযথভাবে রক্ষা করা হয়েছে। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অপরাধীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের এতটা সুযোগ দেওয়া হয়েছে যা পৃথিবীর আর কোন দেশে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আমার প্রতিবেশী দেশ। সুতরাং পাকিস্তানিরা কতটা বর্বর ও নৃশংস তা আমাদের প্রজন্মকে নতুন করে বলার কিছু নেই। ১৯৭১ সালে তারা বাংলাদেশে যে বর্বরতা, নৃশংসতা চালিয়েছে তা বিশ^ ইতিহাসে বিরল। তাই একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করে গণহত্যায় সংশ্লিষ্ট পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিনের শিক্ষক ও জাদুঘর সুহৃদের সদস্য সচিব বায়েজীদ খান ও সুহৃদের কোষাধ্যক্ষ আঁখি সিদ্দিকা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক মহেন্দ্রনাথ সেন। অনুষ্ঠানে জাদুঘরের ট্রাস্টি, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, খুলনা বিশ^বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সাংবাদিক, সুহৃদ সদস্য, জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।