খুলনার ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের অধীনে ‘গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র’ স্থাপন করা হয়েছে। সংস্কৃত বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের একটি প্রকল্প হিসেবে গবেষণা কেন্দ্র তার কার্যক্রম শুরু করেছে। গবেষণা কেন্দ্র থেকে নিয়মিত ‘গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১’ শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়েছে।
১. কোর্সের শিরোনাম : ‘গণহত্যা, নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১’ বিষয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট সার্টিফিকেট কোর্স’।
২. ডিগ্রী প্রদান : এই কোর্সের সকল শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে কোর্সে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীগণ গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র থেকে ‘গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১’ বিষয়ে পোস্ট-গ্রাজুয়েট সার্টিফিকেট কোর্সের ডিগ্রী পাবেন।
৩. উদ্দেশ্য: এই কোর্সটির উদ্দেশ্য হলো গণহত্যা, গণকবর, বধ্যভূমি, নির্যাতন এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে গবেষক সৃষ্টি করা। সার্টিফিকেট কোর্সে অংশগ্রহণকারী প্রশীক্ষণার্থীগণ প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে যে জ্ঞান অর্জন করবেন, মাঠ সমীক্ষায় তা প্রয়োগ করে একটি অভিসন্দর্ভ রচনা করতে পারলে তারা গবেষণা কাজে দক্ষতা অর্জন করবেন । মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা বিষয়ে সম্পাদিত গবেষণা অভিসন্দর্ভগুলি বই হিসেবে প্রকাশ করার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ এবং গণহত্যা বিষয়ে তথ্য এবং জ্ঞান জনমানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে ।
৪.কোর্সের মেয়াদ ও ক্রেডিট : এই পোস্ট-গ্রাজুয়েট সার্টিফিকেট কোর্সটির মেয়াদ তিন মাস। একজন শিক্ষার্থীকে তিন মাসের মধ্যেই কোর্সটি সম্পন্ন করতে হবে। একমাস ক্লাস হবে। প্রতি সপ্তাহে দু’দিন শুক্র ও শনিবার ক্লাস হবে । কারন, এ কোর্সে চাকুরিরত থেকেও ক্লাস ও গবেষনা করা যাবে । প্রতিদিন সেশন হবে ৪টি। প্রতিটি সেশনের জন্য নির্ধারিত সময় ১.১৫ ঘন্টা অথাৎ দিনে ৫ ঘন্টা। পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে মাঠ সমীক্ষার মাধ্যমে একটি গবেষণাপত্র লিখে জমা দিতে হবে।
৫. ভর্তির যোগ্যতা : যেকোন সরকারি ও সরকার অনুমোদিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে কোন শাখা (কলা ও মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান, আইন, বাণিজ্য, বিজ্ঞান, কৃষি, প্রকৌশল, মেডিকেল কলেজ) থেকে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রী (পাস বা সম্মান) পরীক্ষায় ডিগ্রী (পাস বা সম্মান) অর্জনকারী গ্রাজুয়েটগণ এই কোর্সে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে আগ্রহী বা এ বিষয়ক গবেষণার সাথে বা গবেষণা শেষ করেছেন বা পেশাগত ভাবে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত কাজের সাথে যুক্ত আছেন এমন যে কোন ব্যক্তি কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য অগ্রাধিকার পাবেন।
৬. আসন সংখ্যা : প্রতি সেশনে আসন সংখ্যা হবে ৫০টি, তবে জাদুঘর ট্রাস্টি বোর্ড ২০% আসন বৃদ্ধি করতে পারবে।
৭. গবেষণা পদ্ধতি: প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও দলীয় সাক্ষাৎকার গ্রহণ পদ্ধতি দ্বৈবায়িক তথ্যের ব্যবহার ও প্রবন্ধ লিখন কৌশল হাতে কলমে শেখানো হয়। গবেষণা কাজের জন্য প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ের মধ্যে বা সমাপ্তির পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে গবেষণা প্রবন্ধ জমা দিতে হয়। গবেষণা প্রবন্ধ জমা দিলেই কেবলমাত্র একজন প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ সম্পন্নের সনদ পাওয়ার যোগ্য বলে গণ্য হবেন। এই গবেষণা প্রবন্ধগুলো পরবর্তীকালে বই হিসেবে প্রকাশিত হবে।
৮. পাঠ্যক্রম :
প্রথম পত্র : মুক্তিযুদ্ধ – ১ (নির্বাচিত বিষয়সমূহ)
১. মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি (১৯৪৭-৭১): ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, যুক্তফ্রন্ট সরকারের শাসন আমল (১৯৫৪-১৯৫৮), সামরিক শাসন (১৯৫৮-১৯৬২), ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মার্চের অসহযোগ আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ, ২৫শে মার্চের গণহত্যা।
২. স্বাধীনতার ঘোষণা, যুদ্ধ শুরু এবং প্রাথমিক প্রতিরোধ
দ্বিতীয় পত্র : মুক্তিযুদ্ধ – ২ (নির্বাচিত বিষয়সমূহ)
১. স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও বাংলাদেশ সরকার
২. শরণার্থী ও শরণার্থী ব্যবস্থাপনায় ভারত
৩. অবরুদ্ধ দেশে ঘাতকবাহিনীর নির্মম ভূমিকা
৪. মুক্তিফৌজ, যুদ্ধ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা
৫. মুক্তিযুদ্ধ ও ‘সুপার পাওয়ার’
৬. মুক্তিযুদ্ধ এবং ভারত
৭. প্রবাসী বাঙালিদের সহায়তা
৮. বিশ্বসিভিল সমাজের ভূমিকা/সহায়তা
৯. স্বাধীনতা অর্জন ও পাকিস্তানের আত্মসমর্পন
তৃতীয় পত্র : স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস (১৯৭২-১৯৭৫) (নির্বাচিত বিষয়সমূহ)
১. বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও স্বাধীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও সংবিধান
২. রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও সংবিধান সংশোধন (নির্বাচন ১৯৭৩, বঙ্গবন্ধু হত্যা ১৯৭৫, সামরিক অভ্যুত্থান ১৯৮২, গভঅভ্যুত্থান ১৯৯০)
চতুর্থ পত্র : গণহত্যা (নির্বাচিত বিষয়সমূহ)
১. গণহত্যা সম্পর্কীত ধারনা : মানবতা বিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ
২. নুরেমবার্গ-টোকিও থেকে গণহত্যা কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত
৩. ১৯৭১-এ সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধ
পঞ্চম পত্র : নির্যাতন (নির্বাচিত বিষয়সমূহ)
১. গণহত্যার অন্যতম হাতিয়ার যৌন নির্যাতন ও ন্যায়বিচার
২. বীরঙ্গনা : স্বীকৃতি, সহায়তা, প্রত্যার্পণ
৩. গণহত্যা ’৭১: ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ গবেষণা তথ্য এবং দলিল
ষষ্ঠ পত্র : গণহত্যার বিচার (নির্বাচিত বিষয়সমূহ)
১. কলাবরেটর আইন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইন: প্রয়োগ এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিক অগ্রাহ্যতা
২. বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের বিচারিক রায়ে গণহত্যার আইনগত ব্যাখ্যা ও সাংবিধানিক তাৎপর্য
৩. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল: ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় তদন্তকারীর ভূমিকা
৪. বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের কার্যক্রম: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তাৎপর্য/বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে একটি দৃষ্টান্ত
৫. গণহত্যা ১৯৭১: স্বাধীনতা পরবর্তী সামাজিক দ্বন্দ্ব ও মানসিক আঘাতগ্রস্থতা
৬. সমাজতত্বে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ ১৯৭১
৭. গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধীর দায়মুক্তি: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত
সপ্তম পত্র : প্রাকটিক্যাল
গবেষণা পদ্ধতি : প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও দলীয় সাক্ষাৎকার গ্রহণ পদ্ধতি
১. সেকেন্ডারি ডাটার ব্যবহার ও প্রবন্ধ লিখন কৌশল
২. চলচ্চিত্র প্রদর্শনী
৩. কেস স্টাডি
অষ্টম পত্র : মাঠ সমীক্ষা ও প্রতিবেদন প্রণয়ন (প্রশিক্ষণের শুরু থেকে ৩ মাস) (১০ ক্রেডিট)
৯. মূল্যায়ন পদ্ধতি ও ডিগ্রি প্রদান :
জাদুঘর ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক ৩ সদস্য বিশিষ্ট গবেষণা পত্র পরীক্ষক/মূল্যায়ণকারী গঠন করা হবে। পরীক্ষকগণ সরকারি ও সরকার অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হবেন।