১৯৭১ :গণহত্যা ও নির্যাতন

জাতীয় জাদুঘরে আট দিনব্যাপী প্রদর্শনী

জাতীয় জাদুঘরের নলীকান্ত ভট্টাশালী গ্যালারিতে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ৯ তারিখ থেকে শুরু হয় ১৯৭১ : গণহত্যা ও নির্যাতন শিরোনামের প্রদর্শনী। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহঙ্কার, আমাদের পরিচিতি, আমাদের গৌরবের ধন। আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের এই গৌরবজনক অধ্যায়টির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অকথ্য নির্যাতন ও গণহত্যা। মুক্তিযুদ্ধের এই বেদনাক্লিষ্ট দিকটি নতুন প্রজন্মের কাছে যথাযথভাবে তুলে ধরার লক্ষ্যে ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর যৌথভাবে ‘১৯৭১: গণহত্যা ও নির্যাতন’ শীর্ষক আট দিনব্যাপী এক বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলো।
জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত গণহত্যার ৩০টি নিদর্শন, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন রচিত ৭০টি গ্রন্থ এবং বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীদের চিত্রকর্মে অনুকৃতি ও গণহত্যার আলোকচিত্রের সমন্বয়ে প্রদর্শনীটি হয়েছিলো। সপ্তাহব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। উদ্বোধনের আগে জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আলোচনা অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ১৯৭১ গণহত্যা ও নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন গণহত্যা ও নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের সম্পাদক ডা. শেখ বাহারুল  আলম। জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টিবোর্ডের সভাপতি এম আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। আলোচনার শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর  উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীরা পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গীত ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’।
সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘আমাদের শুত্রুপক্ষ সব সময় সংঘবদ্ধ কিন্তু আমরা এমনটি হতে পারিনি। তাদের মতো আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারিনি। বিশাল একটা জনগোষ্ঠী স্বাধীনতার পক্ষে থাকা সত্ত্বেও কেন বিভেদ ভুলে এক হয়ে কাজ করতে পারে না? স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছর পরেও কীভাবে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি মানুষের ভোট পায়, মন্ত্রী হয়, দেশ পরিচালনা করে– এ বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘যারা উল্টোপথে পরিচালিত করে ইতিহাসকে মুছে ফেলতে চাইছে।
ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে আমি বিজয়কে বড় করি দেখি। এর কারণও আছে। সেটা হলো বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের চূড়ান্ত ফল। মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা ও নির্যাতন।’ মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘বিজয়কে মানুষ মনে মনে রাখে কিন্তু সে স্মৃতিও দুর্বল হয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তার বড় কারণ এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব না দেয়া। ইউরোপে ২য় বিশ্বযুদ্ধে ১ কোটির বেশি লোক মারা যায়। সে কারণে আজ পর্যন্ত চলচ্চিত্রে, চিত্রকলায় সেই গণহত্যার নিদারুণ পরিণতির কথা তুলে ধরা হয়। এমনকি সেটিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মিউজিয়াম পর্যন্ত গড়ে তোলা হয়েছে। ভুলতে দেয় না গণহত্যা কী! আমরা গণহত্যার কথা ইতিমধ্যে ভুলতে শুরু করেছি। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাধ্যতামূলকভাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ১০০ নম্বরের একটি কোর্স চালু করার দাবি জানান।
© Genocide Museum Bd | All Rights Reserved | Developed by M Dot Media